উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বন্যা কবলিত এলাকায় ঋণ বিতরণ বাড়ানোর পাশাপাশি বন্যার্তদের জন্য সিএসআর (ব্যাংকগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা) খাত থেকে ব্যয়ের পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
শনিবার (১৮ জুন) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় এক সেমিনারে গভর্নর এ পরামর্শ দেন। ‘বাংলাদেশ মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়নে প্রতিরোধ কার্যক্রমের ২০ বছর’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
অনুষ্ঠানে বন্যায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে গভর্নর বলেন, সিলেটের কৃষকরা ঋণ পরিশোধ করুক বা না করুক তাদেরকে ঋণ বিতরণ বাড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় সিএসআর খাত থেকে ব্যয় করার পরামর্শ দেন তিনি ।
বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান হয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি মাসরুর আরেফিন, ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলীসহ বিএফআইইউয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ দুই জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহতম বন্যা দেখা দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে দুই জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ।
বেশিরভাগ এলাকার সঙ্গে সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আটকে আছে। প্রয়োজনীয় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে বন্যাদুর্গত এলাকায়। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে পানি প্রবেশ করায় সেবাদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অসুস্থ অনেক মানুষকে যানবাহনের অভাবে হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। শহর ও গ্রামের প্রায় সব সড়ক পানির নিচে ডুবে আছে।
এ অবস্থায় আক্রান্ত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটও বন্যার্তদের উদ্ধার ও খাদ্য সহায়তায় কাজ করছে। বন্যার কারণে এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।