দুই মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম কমেছে ৩২ শতাংশ আর পাম তেলের দাম কমেছে ৪৮ শতাংশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে তেলের দাম কমিয়েছে সরকার। যদিও এর প্রভাব এখনও পড়েনি বাজারে। খুচরা বাজারে এখনও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল।  

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমায় গত ১৭ জুলাই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এ দাম ১৮ জুলাই থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ রাজধানীর কয়েকটি মার্কেট ঘুরে নতুন দামে তেল বিক্রি হতে দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, সরকার নির্ধারিত দামে তেল কিনতে চাওয়া ক্রেতাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে গুদাম কিংবা খুচরা দোকানগুলোতে যে সয়াবিন তেল আছে তা আগের দামেই কেনা। তাই সেগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি করা সম্ভব নয়। লোকসান দিয়ে তো কেউ ব্যবসা করবে না। নতুন দামে তেল পাওয়ার আগ পর্যন্ত আগের দামেই বিক্রি হবে।

 

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ এবং শান্তিনগরসহ কয়েকটি বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার ১৯৬ থেকে ১৯৮ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর অলি-গলির মুদির দোকানে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার। অর্থাৎ বাড়তি দামেই ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রি করছেন। পাঁচ লিটার বোতলের পুষ্টি, রূপচাঁদা, তীর, বসুন্ধরাসহ অন্য ব্র্যান্ডের তেল আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। এগুলো ৯৭০-৯৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৫৮ টাকা লিটার।

    খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে এখনো সরকার-ঘোষিত দামে তেল সরবরাহ করেনি কোম্পানিগুলো। আজ মিল গেট থেকে তেল ছাড়া হলে খুচরা বাজারে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ কম দামে তেল পেতে আরও ৫-৭ দিন লেগে যেতে পারে।

মালিবাগ বাজারে তেল কিনতে আসা রামপুরার বাসিন্দা মানকিন ভট্টাচার্য বরিশাল স্টোর নামে একটি দোকানে ভোজ্যতেলের দাম জানতে চান। দোকানি শহিদুল ইসলাম বলেন, সয়াবিনের লিটার ২০০ টাকা। মানকিন বলেন, তেলের দাম তো কমে ১৮৫ টাকা হয়েছে, আপনি বেশি রাখছেন কেন? জবাবে শহিদুল বলেন, যে বলেছে আপনি তার কাছ থেকে গিয়ে তেল নেন। ২০০ টাকার এক পয়সাও কম বিক্রি করব না।  

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিক্রেতা শহিদুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকার তেলের দাম কমিয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের কাছে কম মূল্যের মাল এখনও আসেনি। আমরা বেশি দামে কেনা তেল এখনো বিক্রি করছি। এই মাল তো কম দামে বিক্রি করতে পারব না।’

 

ক্রেতা মানকিন ভট্টাচার্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দাম বাড়ানোর সময় সরকারের ঘোষণার আগেই দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। আর কমানোর সময় শুরু হয় টালবাহানা।’

মগবাজার থেকে কারওয়ান বাজারে আসা ক্রেতা ইমতিয়াজ উদ্দিন মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে লিটারে তেলের দাম কমেছে শুনেছি ৪০ টাকার বেশি (পাইকারি)। অথচ সরকার কমাল মাত্র ১৪ টাকা। আবার ব্যবসায়ীরা তাও মানছে না, বিক্রি করছে আগের দামে। একটা যেন সার্কাস চলছে!
সরকার তেলের দাম কমিয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের কাছে কম মূল্যের মাল এখনও আসেনি। আমরা বেশি দামে কেনা তেল এখনো বিক্রি করছি। এই মাল তো কম দামে বিক্রি করতে পারব না।
বিক্রেতা শহিদুল

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের নেতা ও সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আজ মিল গেট থেকে সরকারের নির্দেশ অনুসারে ১৪ টাকা কমে তেল বাজারে ছাড়া হবে। বাজারে এর প্রভাব পড়তে একটু সময় লাগবে।’

আরও এক সপ্তাহ লেগে যাবে নতুন দাম কার্যকরে

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গতকাল এক চিঠিতে বাণিজ্য সচিবকে জানিয়েছিল বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে সরকার-ঘোষিত কম মূল্যে তেল পাওয়া যাবে। কিন্তু আজ বাজারে এর প্রতিফলন পাওয়া যায়নি।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে এখনো সরকার-ঘোষিত দামে তেল সরবরাহ করেনি কোম্পানিগুলো। আজ মিল গেট থেকে তেল ছাড়া হলে খুচরা বাজারে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ কম দামে তেল পেতে আরও ৫-৭ দিন লেগে যেতে পারে।

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার চিত্র

এ বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ভোগ্যপণ্যের মার্কেটপ্লেস যুক্তরাষ্ট্রের কমোডিটি এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ওঠে ১ হাজার ৯৫০ ডলার। ওই সময় বাংলাদেশে এক ডলার কিনতে খরচ হত ৮৬ টাকা। সে হিসেবে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৫৩ টাকা।

ওই বাজারে গত ১৪ জুলাই প্রতি টন সয়াবিন বিক্রি হয় ১ হাজার ৩১৮ ডলারে। প্রতি ডলার ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা ধরে লিটারপ্রতি দর দাঁড়ায় ১১৩ টাকা। অর্থাৎ দুই মাসে বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে ৬৩২ ডলার বা ৩২ শতাংশ।