কাজী কামাল হোসেন,নওগাঁ
নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ এর চাল বিতরনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম রুবেলের বিরুদ্ধে। উপকারভোগীদের নামের তালিকায় বিভিন্ন জীবিত ও মৃত ব্যক্তিদের ভোটার তথ্য ব্যবহার করে তাদের নামে অবৈধ ভাবে চাল উত্তোলন করে আত্মসাত ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে হরিলুট করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গরীব, অসহায় ও দু:স্থ মানুষের মাঝে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিংয়ের (ভিজিএফ) চাল বিতরণ করা হয়েছে। যেখানে ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের উপকারভোগীদের তালিকা তৈরী করে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ৪ জুলাই সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর ১হাজার ৬৯৪ জন উপকারভোগীর নামের তালিকা তৈরী করে জমা দেন চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। যেখানে অনেক মৃত ব্যক্তিদের জীবিত দেখিয়ে তালিকায় নাম দেয়া হয় এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত কারণে বসবাসকারী ওই ইউনিয়নের লোকেদের নাম দেয়া হয়। তালিকায় একাধিক চাকুরীজীবী, বিত্তবান ও দাদন ব্যবসায়ীর নামও দেখা যায়। এছাড়াও জীবিত যাদের নাম দেয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই ভিজিএফ তালিকায় নাম থাকা বিষয়ে অবগত নন। অথচ তাদের অজান্তেই তাদের নামে চাল উত্তোলন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। ঈদের পর বিষয়টি জানাজানি হলে পুরো ইউনিয়ন জুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
চন্ডিপুর ইউনিয়নের বলিরঘাট গ্রামের জহুরা বেগম ও আবদুল মজিদ, পাশ^বর্তী ইলশাবাড়ী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ও চুনিয়াগাড়ী গ্রামের এবাদুল হক ও স্বপন বলেন, ঈদে ভিজিএফ এর চাল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিরতরণ করা হলেও তালিকায় আমাদের নাম থাকার বিষয়টি জানানো হয়নি। ঈদের কিছুদিন পর জানলাম ওই তালিকায় আমাদের নাম দিয়ে চালগুলো অন্য কেউ তুলে নিয়েছে।
চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা মারুফ আহম্মেদ বলেন, ভিজিএফ এর তালিকায় অসংখ্য জীবিত এবং মৃত ব্যক্তিদের নাম দিয়ে চাল উত্তোলন করেছেন চেয়ারম্যান। মৃতদের মধ্যে মুক্তি আক্তার ও শ্যামলী বেগম অনেক বছর আগে মারা গেছে তাদের নামও তালিকায় তুলে চাল উত্তোলন করা হয়েছে।
সদর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার ও ইউনিয়ন ট্যাগ অফিসার ওয়াহেদুল্লাহ প্রামাণিক বলেন, চাল বিতরণের দিন একই ব্যক্তি একাধিক কার্ড দিয়ে বিপুল পরিমাণ চাল উত্তোলন করেছেন। তাদের বাঁধা দিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পরিচয় দেয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েও লাভ হয়নি। বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছিলাম। চাল দিতে বিকেল হয়ে যাওয়ার কয়েক বস্তা চাল বিতরন শেষ না হতেই আমি চলে আসি।
চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম রুবেল বলেন, ভিজিএফ এর তালিকা স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা মিলে তৈরী করেছেন। ইউপি সদস্যদের মাধ্যমেই উপকারভোগীদের মাঝে টোকেন দেয়া হয়েছিল। চাল বিতরণের দিন যাতে একই ব্যক্তি একাধিকবার চাল নিতে না পারে, সেজন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজে উপস্থিত ছিলাম। কিছু লোক টোকেন নিয়ে সময়মতো উপস্থিত না হওয়ায় অবশিষ্ট চালগুলো শেষ মুহুর্তে উপস্থিত জনসাধারনের মাঝে বিতরন করা হয়। ভিজিএফ এর তালিকা তৈরী এবং চাল বিতরনে আমার বিরুদ্ধে আনা অনিয়মের অভিযোগটি সঠিক নয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, চন্ডিপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ এর তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নাম থাকাসহ চাল বিতরণে নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে দেখতে ট্যাগ অফিসারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করা হবে।
নওগাঁয় ভিজিএফ’র নামে হরিলুট!! তালিকায় মৃত ব্যক্তি, দলীয় নেতাকর্মী, চাকুরীজীবী, বিত্তবান ও দাদন ব্যবসায়ী
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৮:৩১ এএম

