রিকোর্স চাকমা,রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম অভির বিরুদ্ধে 'যৌন নিপীড়ন' ও 'অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনের' অভিযোগ তুলেছেন এক নারী পুলিশ সদস্য। কনস্টেবল পদমর্যাদার ওই পুলিশ সদস্য এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগটি জানাজানির পর রাঙ্গামাটির আদালত পাড়ায় কানাঘুষা শুরু হয়েছে।
গত ২৩ জুলাই রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগে নারী পুলিশ সদস্য ঘটনার দিন ১৪ জুলাইয়ের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, 'গত ১৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে সাইফুল ইসলাম অভি ভুক্তভোগীকে এজলাসের এসি/ফ্যান বন্ধ কেন জিজ্ঞেস করেন। প্রতিউত্তরে ফ্যান নষ্ট বলার পর অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম বলেন তোমরা কি চেহারা দেখাইতে আসছো? এসময় তিনি ধমক দিয়ে ভুক্তভোগীকে বের হয়ে যেতে বলেন; এমন কাণ্ডে পুলিশ সদস্যসহ উপস্থিত ব্যক্তিগণ হতভম্ব হয়ে যান। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে নারী পুলিশ সদস্যরা ডিউটি করে; তাদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই যৌন নিপীড়নমূলক ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করেন সাইফুল। নারী পুলিশ সদস্যরা ডিউটিরতকালে পিপি সাইফুল এজলাসে আসার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে গা ঘেঁষে এজলাসে প্রবেশ করেন।'
অভিযোগ আরও উল্লেখ করা হয়, সাইফুল ইসলাম অভি বিভিন্ন সময়ে কুরুচিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অশালীন ইঙ্গিত করেন; এতে করে বিব্রতকর পরিস্থিতির স্বীকার হন অভিযোগকারী। পিপির এমন যৌন নিপীড়নমূলক আচরণের কারণে কোর্টে নারী পুলিশ সদস্যগণ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। যে কারণে সরকারি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন মামলার বাদী, ভিকটিম ও সাক্ষীদের সঙ্গেও সাইফুল ইসলাম অভি দুর্ব্যবহার ও হয়রানিমূলক আচরণ করেন। তার এমন আচরণে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আগত বাদী, ভিকটিম ও সাক্ষীসহ অন্যান্য নারীরা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে থাকেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের বিচার করা হয়, কিন্তু আমরা নারী পুলিশ সদস্যগণ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি কর্তৃক উক্ত ট্রাইব্যুনালেই নির্যাতিত হচ্ছি এবং আইনের আশ্রয়প্রার্থী বাদী ও ভিকটিমগণ ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হচ্ছে।'
লিখিত অভিযোগে রাঙ্গামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম অভির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রার্থনা করেন ভুক্তভোগী নারী কনস্টেবল। লিখিত অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা ও দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, জেলা প্রশাসক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বরাবরেও।
অভিযোগ রয়েছে, রাঙ্গামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম অভি আদালতে আগত বাদী, ভুক্তভোগী, সাক্ষী ও ন্যায় বিচারপ্রার্থীদের মামলার কাগজপত্র আদালতে দাখিলের পূর্বে তিনি ঘুষ দাবি করেন এবং ঘুষ না পেলে কাগজপত্র হাজিরে কালক্ষেপন করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে যোগদান করেন সাইফুল ইসলাম অভি৷ যোগদানের ৫ মাসের মধ্যে যৌন নিপীড়ন ও অনৈতিকভাবে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ আদালতের বিশেষ পিপি ছিলেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য জানান, 'এসপি স্যারের অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। স্যাররা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। আপাতত আমাকে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।'
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম অভি বলেন, 'বিষয়টি নেহাত ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আজ সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এসপির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে আসছি।'
এ প্রসঙ্গে জানতে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাঁর কার্যালয়ে গিয়েও সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি।