কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় পদ্মার চর থেকে মিলন হোসেনের (২৭) মরদেহের ১০ টুকরো উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬ জনকে আদালতে নেওয়া হয়েছে। রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় কুষ্টিয়া আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার এজলাসে তাদের হাজির করা হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত তাদের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছিল।

এর আগে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া সদর মডেল থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন নিহত মিলনের মা শেফালী খাতুন।

 

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত  জড়িত থাকার অভিযোগে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এসকে সজিবসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত বাকিরা হলেন- লিংকন, জনি, ইফতি, সজল ও ফয়সাল।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সজিব কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধান।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় সজিবকে। বর্তমানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়ার এক সময়ের মাদক ব্যবসায়ী মিলন শেখ ওরফে ডাল মিলনের ছেলে।

কিশোর গ্যাং গ্রুপের সন্ত্রাসীদের দাবি করা চাঁদা না দেওয়ার কারণে মিলন হোসেনকে হত্যার পর মরদেহ কেটে ১০ টুকরা করে পদ্মার চরে পুঁতে রাখা হয়।

গত শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় পদ্মা নদীর চর থেকে মরদেহের ১০ টুকরো পদ্মার চরের চার স্থান থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মিলন গত বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন।

 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে হাউজিং এলাকার সজল নামে একজন মিলনকে মোবাইলে কল করে ডেকে নিয়ে যান। কল পেয়ে শহরের ভাড়া বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। নিখোঁজের পর বুধবার সন্ধ্যায় মিলনের স্ত্রী মিমি কুষ্টিয়া সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এরপর মোবাইলের কল লিস্টের সূত্র ধরে সাবেক ছাত্রলীগের নেতা এসকে সজিবসহ ৫ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন তারা। এরপর তাদের দেখানো পদ্মার চরের ৪ জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মরদেহের ১০ টুকরো। সজিবের নেতৃত্বে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মিলনকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যান তারা। এরপর কুষ্টিয়ার হাউজিং এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এর পর মরদেহ ১০ টুকরো করা হয়। পরে সেগুলো পলিথিনের ব্যাগে করে ৪টি মোটরসাইকেলে করে পদ্মার পাড়ে নিয়ে যান ৭ জন। এরপর পায়ে হেঁটে নদীর পাড় থেকে বেশ দূরে নদীর চরের চার স্থানে বালুর ভেতরে পুঁতে রেখে তারা শহরে ফিরে সাভাবিক জীবন যাপন করছিল।

 

মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুন বলেন, সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দেওয়ার কারণে আমার স্বামীকে ১০ টুকরো করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত বুধবার হাউজিং এলাকার সজল নামের একজন আমার স্বামীর মোবাইলে কল করে ডেকে নিয়ে যান। তার সঙ্গে দেখা করে বাসায় এসে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবার বের হয়ে যান। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর ওইদিনই আমি কুষ্টিয়া সদর মডেল থানায় জিডি করি। পরে শনিবার সকালে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে মর্গে আসি। আমি এ হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, মিলন হোসেনকে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহতের মা। এ ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়েছে। মিলন হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পূর্ব বাহির মাদি এলাকার মাওলা বক্সের ছেলে। তিনি আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতেন। গত ১০ মাস আগে বিয়ে করেন। স্ত্রী মিমিকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।