দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন থেকে বেসরকারি ফলাফলে দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শাহীন আক্তার। তিনি এ আসনের সাবেক দুই বারের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী। এ নিয়ে টানা চারবার কক্সবাজারের এ আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছেন শাহীন-বদি দম্পতি।

রবিবার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে শাহীন আক্তার ১ লাখ ২২ হাজার ৮০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।

 
তার প্রতিদ্বন্দী স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর পেয়েছেন ৩১ হাজার ৭০৭ ভোট। 

 

উখিয়া-টেকনাফ আসনটিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আব্দুর রহমান বদি প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের বার ২০১৪ সালেও তিনি দ্বিতীয় বার দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত শাহীন আক্তার বলেন- ‘আমার এলাকার বেকার যুব সমাজের প্রতি সজাগ দৃষ্টি থাকবে।

 
সীমান্ত এলাকার দুই উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ার ইয়াবা কারবার বন্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করে কাজ করব। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের টেন্ডার হওয়া কাজ দ্রুত সম্পাদনে আমি সচেষ্ট থাকব।’ সেই সঙ্গে দুই উপজেলার অসমাপ্ত প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত সমাপ্ত করতে কাজ করব।

 

২০১৮ সালের নির্বাচনে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দলীয় মনোনয়ন পাননি বদি।

 
তার পরিবর্তে তারই স্ত্রী শাহীন আক্তারকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনে শাহীন আক্তার প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন পেয়ে শাহীন আকতার দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে টানা চারবার বদি পরিবারে সংসদ সদস্যপদ ধরে রাখার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন বদি-শাহিন দম্পতি।

 

সীমান্তের ইয়াবা কারবারসহ নানা কারণে অকারণে দেশজুড়ে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির সমালোচনা রয়েছে ব্যাপক।

 
এরপরও সবকিছু পেছনে ফেলে তিনি এবং স্ত্রী শাহীন আক্তার দুই মেয়াদ করে চার মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশরকে নিয়ে ভোটের মাঠে কম মাতামাতি হয়নি। অনেকেই আসনটি বদি পরিবারের হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কাও করেছিলেন। তবে শেষমেষ বদির স্ত্রীই জিতেছেন বড়সড় ব্যবধানে।

 

বদি বা তার স্ত্রীর ধারাবাহিক জয়ের ব্যাপারে টেকনাফের বাসিন্দা মো. মাসুদ বলেন, অনেকের কাছে নানান দোষে দোষী বদি সাধারণ নিম্ন-মধ্যবর্তী পরিবারের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক কারণে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব থাকলেও সাধারণ মানুষকে তিনি ভালো পাত্তা দেন। এ ছাড়া তিনি কারো ব্যক্তিগত সমস্যায়, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সাহায্য করেন। এসব কারণে সাধারণ ভোটাররা বদিকে সমর্থন করেন।

নির্বাচনে বদির স্ত্রী শাহীন আক্তারের জয় প্রসঙ্গে সচেতন ভোটারদের ধারণা, শুধু টাকা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করে বদি পত্নীর নির্বাচিত হওয়ার কথাটি সঠিক নয়, জয়ের পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে স্বামী-স্ত্রী পৃথক মেয়াদে টানা ১৫ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন এ আসনটিতে। তারও আগে বদি টেকনাফ পৌরসভার মেয়র হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন। টেকনাফের স্থানীয় রাজনীতিতে তার বাবা মরহুম এজাহার মিয়া কম্পানি বেশ পরিচিত এবং জনপ্রিয় ছিলেন।

এ ছাড়া বদির চাচা মোহাম্মদ ইসলাম টেকনাফ পৌরসভার বর্তমান মেয়র। অপরদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য ও বদির স্ত্রী শাহীন আক্তারের পরিবার উখিয়া উপজেলার রাজনীতিতে বেশ পরিচিত। শাহীন আক্তারের বাবা নুরুল ইসলাম উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তার ভাই জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং রাজাপালং ইউনিয়নের টানা তিন বারের চেয়ারম্যান।

এ হিসেবে টেকনাফে বদির পরিবার এবং উখিয়াতে স্ত্রী শাহীন আক্তারের পরিবার দুই উপজেলায় দুটি শক্তিধর এবং জনপ্রিয় পরিবার হিসেবে পরিচিত। তাই সংসদ নির্বাচনে বদি পরিবারের সঙ্গে টিকে থাকা অন্য যেকোনো প্রার্থীর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।