ঢাকা: সব দল অংশ না নিলেও ভোট যদি অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে গতকাল রবিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হওয়া উচিত বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কিছু বলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। তবে সে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে তারা প্রত্যাশা করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যাশার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা মিলে গেছে। সরকার এখন আরো চাঙ্গা বোধ করছে।
সরকারের বক্তব্যে মার্কিন প্রশাসন আশ্বস্ত কি না জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে। ‘গ্রহণযোগ্যের’ বিষয়টি বলেনি। সেটি (গ্রহণযোগ্য) আমরা চাই।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলো। সব দল অংশ নিল না। সেটি কি গ্রহণযোগ্য হবে?’
জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবশ্যই হবে। কেন হবে না? দেশের মানুষ ভোট দিলে হবে না কেন?’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে কয়টি দল? প্রায় ৮০-৯০টি দল। আমেরিকা বড় দেশ। তাদের অনেক দল আছে। ওগুলোর নাম কখনো শুনেছেন? লিবারেটেরিয়ান, ইনডিপেনডেন্ট, অমুক-তমুক দল। শুধু শোনেন দুই দলের নাম।’
এ পর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, আমাদের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যদি অংশ না নেয় তাহলে কি গ্রহণযোগ্য হবে? জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে বড় দল হচ্ছে বিরোধী দল, জাতীয় পার্টি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিকে বিস্ময়কর উল্লেখ করে বলেছে, তারা নির্বাচনে ম্যাজিক দেখতে চায়, যাতে তারা নির্বাচন প্রসঙ্গে সারা বিশ্বকে বলতে পারে, বাংলাদেশকে দেখো।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাননি মোমেন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে, সুষ্ঠু নির্বাচন। আমি বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন সরকার একা করলে হবে না। নির্বাচন কমিশন একা করলে হবে না। সব দল ও মতের মধ্যে ঐকান্তিকতা, আন্তরিকতা থাকতে হবে। তোমরা সাহায্য করো।’
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন কি না—প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না। আমি বলেছি, সব দলের ঐকান্তিকতা, আন্তরিকতা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঠিকমতো হয়নি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি, আমরা মনে করি যে ডিএসএর ক্ষেত্রে কোনো কোনো ঘটনায় প্রয়োগ ঠিকমতো হয়নি। সেগুলো আমরা বিচার করছি। এখানে যদি কোনো দুর্বলতা থাকে আমরা দেখব।’
মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রেও সাইবার স্পেসের আইন আছে। সব দেশেই এটি (যথার্থ প্রয়োগ না হওয়া) হতে পারে। যেমন—পুলিশকে কেউ বলে না যে একটা নিরীহ লোককে গুলি করে মেরে ফেলো। কিন্তু মেরে ফেলে। এ ধরনের ব্যত্যয় ঘটে। এর অর্থ এই নয় যে বন্দুকটা খারাপ। বন্দুকের ভালো ব্যবহার হয়, খারাপ ব্যবহারও হয়। এ জন্য আমাদের আইনে যদি কোনো দুর্বলতা থাকে আমরা তা ঠিক করব।’
বিদেশিদের কাছে নালিশ করে সুবিধা হবে না : যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটি খুব দুঃখজনক। তাদের (বিএনপির) বরং তৃণমূলের লোকজনের কাছে, যারা ভোটার তাদের কাছে যাওয়া উচিত। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে কোনো লাভ হবে না। কারণ বিদেশিরা তো ভোট দেবে না, ভোট দেবে বাঙালিরা। তাদের তৃণমূলের কাছে, ভোটারদের কাছে যাওয়া উচিত।’
বিদেশিদের কাছে নালিশ করে সুবিধা হবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদেরও তৃণমূলের ভোটারদের কাছে যেতে হবে। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে, যাতে দেশের মানুষের মঙ্গল করতে পারি। মানুষের সঙ্গে আলাপ করে বুঝতে পারি। অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা আছে। তৃণমূলের লোকের সঙ্গে আলাপ করলে তারা বলবে, এখানে খারাপ, ওখানে খারাপ।’
বিদেশে কে টাকা লুকিয়ে রেখেছে তা খোঁজা পররাষ্ট্রের কাজ নয় : পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে অনুসন্ধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করছে না—এমন সমালোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোথায় কে টাকা লুকিয়ে রাখছে তা দেখা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। দুদকের কাজ সেটা বের করে দেখা। এটা আমাদের দায়দায়িত্ব না। তারা যদি বিদেশে যেতে চায়, ভিসা ও অন্যান্য বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব।’