ঢাকা: মাদকাসক্তদের সংখ্যা ও মাদকের অপব্যবহার বাড়লে দেশের নিরাপত্তা, সুশাসন, অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে বলে এক বাণীতে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তাই মাদকের অপব্যবহার ও পাচাররোধে সম্মিলিত উদ্যোগ খুবই জরুরি।
রোববার (২৬ জুন) ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২২’উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে এসব কথা জানান রাষ্ট্রপতি। একইসঙ্গে দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিবসটি পালনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জানান, বৈশ্বিকীকরণের প্রভাব ও তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উৎকর্ষ তথা ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রায় যেমন ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তেমনি প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারীরা মাদকের উৎপাদন, বিপণন ও পাচারে তথ্যপ্রযুক্তিকে অন্যায়ভাবে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর একপ্রান্ত হতে অপর প্রান্তে মাদক পৌঁছে দিচ্ছে।
ফলে মাদকসহ অনেক জীবননাশকারী দ্রব্য সহজেই মাদকসেবীদের হাতের নাগালে চলে আসছে। বর্তমানে যুবসমাজ ট্র্যাডিশনাল ড্রাগস গ্রহণের পরিবর্তে সিনথেটিক ড্রাগসের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, যা শরীরের জন্য বেশি ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থাকে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে দেশে মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধের পাশাপাশি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে যুবসমাজ।
দিবসের সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে গণমাধ্যমকে জানান, সরকার মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করছে।
মাদকাসক্তদের যথাযথভাবে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ‘National Gideline for Management of Substance Use Disorders, Bangladesh’ প্রণয়ন করা হচ্ছে। দেশের যুবসমাজকে মাদকের নীল দংশন থেকে রক্ষা করতে সমাজের সকল স্তরে মাদকের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন মনে করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে জানান, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা সরকার গঠনের পর মাদক নিয়ন্ত্রণে নতুন নতুন কার্যক্রম গ্রহণ করি। মাদক অপরাধ দমনে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ঘোষণা অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ দেশের সকল আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
এ সংক্রান্ত আইন যুগোপযোগী করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ প্রণয়ন এবং ইতোমধ্যে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
শনিবার (২৫ জুন) গণমাধ্যমে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, সুস্থ ও সমৃদ্ধ একটি জাতি গঠনে মাদকাসক্তদের সুচিকিৎসার প্রয়োজন। এ জন্য সরকার বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত বেসরকারি ও পরামর্শকেন্দ্রগুলোকে সরকারি অনুদান প্রদানের পাশাপাশি তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা বাড়াতে বিদ্যমান সরকারি কেন্দ্রগুলোতে শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণসহ ঢাকার বাইরে সাতটি বিভাগে ২০০ শয্যা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
মাদক নির্মূলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।