ঢাকা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন ও উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে জার্মানির অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আজ বৃহস্পতিবার স্পিকারের সংসদ ভবনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ সফররত জার্মান পার্লামেন্টারি ডেলিগেসনের সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে এই সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সাক্ষাৎকালে তারা বাংলাদেশ-জার্মানির সুদীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন, জলবায়ু অভিযোজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন, বাংলাদেশে নারীদের অগ্রগতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে জার্মানির বিনিয়োগসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন।
এ সময় স্পিকার বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২৩ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে জার্মানি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর বিগত পঞ্চাশ বছরে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আজ অনন্য উচ্চতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ এবং জলবায়ু অভিযোজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য।'
তিনি আরো বলেন, 'সরকার দেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নের পাশাপাশি শতভাগ বিদ্যুতায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আনয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব বিবেচনায় টেকসই উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে ডেল্টাপ্লান ২১০০ প্রণয়ন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ ও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ এবং নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক মতায়নসহ সকল ক্ষেত্রে সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।'
সাক্ষাৎকালে জার্মান এমপি রিনেট কুনাস্ট বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব বিবেচনায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ দেশ। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বহিঃপ্রকাশ। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা স্থিতিশীল রয়েছে, যা প্রশংসনীয়।'
নারীর মতায়নের প্রশংসা করে প্রতিনিধি দলের সদস্য রিয়া স্রডার বলেন, 'কর্মক্ষেত্রে নারীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা সকলেরই দায়িত্ব।'
সংসদ সদস্য আন্দ্রিয়াস লারেম বলেন, 'ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রভাব ফেলেছে।' এরপর পোশাক শিল্পখাতে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য পল লারিডার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
জবাবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, 'বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ইত্যাদি সংগঠনের সাথে সর্বদা আলোচনার মাধ্যমে সরকার পোশাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে বর্তমানে শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা অনেক বেশি।'
তিনি আরো বলেন, 'যুদ্ধ পরিস্থিতি, বৈশ্বিক ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি হিমশিম খেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে।'
বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক কাঠামোর উত্তরণের প্রশংসা করেন জার্মানির সংসদীয় প্রতিনিধিদল। আর স্পিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার রক্ষার্থে তাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে জার্মানির সহযোগিতা কামনা করেন।