ঢাকা: বহুল প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতু। সব কষ্টের অবসান হতে আর মাত্র ৩দিন বাকি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে অনেক কষ্টের মুক্তি মিলছে ২৫ জুন। পদ্মার দক্ষিণ পাড়ের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্ন পুরণ হতে যাচ্ছে। হাজার বছরের স্বপ্ন ডানা মেলছে। যদিও ২৬ জুন থেকে যানবাহনের জন্য পুরোপুরি খুলে দেয়া হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে ‘পদ্মা সেতু’ হচ্ছে জেল জীবনের অবসান হওয়ার মত। এর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরবির্তন আসার পাশাপাশি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘটবে শিল্প বিপ্লব। হবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখন পরিবহন চালকদের মুখে মুক্তা ঝরানো হাসি। আর ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে হবে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
মাওয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করে দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট, খুলনা, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে নিয়মিত ঢাকা থেকে যাতায়াত করে যাত্রবাহী বাস।
অনেক পরিবহনের গাড়ি মাওয়া ঘাটে গিয়ে লঞ্চে যাত্রীদের তুলে দিয়ে অপরপ্রান্ত থেকে অন্য গাড়িতে করে গন্তব্যে পৌঁছে দিত। একইভাবে একপার থেকে যাত্রীদের নিয়ে আসা হত মাওয়া প্রান্তে, তারপর অন্য গাড়িতে করে ঢাকায়। এখন আর সেই ঝুঁকি নিতে হবে না পরিবহনগুলোকে।
একাধিক পরিবহনের চালকেরা বলছেন, পদ্মা সেতু তাদের জীবনের গল্প পাল্টে দিচ্ছে। বিষিয়ে উঠা জীবনে স্বস্তি ফিরবে। নড়াইলের পরিবহন চালক জহিরুল ইসলাম বলেন, ২৫ বছর ধরে এই সড়কে গাড়ি চালিয়ে জীবনটা একেবারে বিষিয়ে উঠেছিল। ফেরঘিাটের অপেক্ষা ছিল মৃত্যুর চেয়ে ভয়ঙ্কর। ঝড়বৃষ্টি আর ঘন কুয়াশায় যখন ফেরি বন্ধ থাকত তখন তো অপেক্ষার শেষ হত না। পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ায় সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
যশোরের পরিবহণ চালক মুন্সি বলেন, পদ্মা সেতু হলে যাত্রীদেরও কষ্ট কমবে। এক্ষেত্রে হয়ত কিছুটা বাড়তি ভাড়া গুণতে হবে যাত্রীদের। তবে সেটা খুব বেশি হবে না। তিনি বলেন, সেতু দিয়ে যখন গাড়ি চলাচল করবে, যাত্রী প্রতি বাড়তি ৩০ টাকা ভাড়া বেশি হতে পারে। ফেরি পারাপারে গাড়ি প্রতি খরচ হবে ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা।
তিনি জানান, সেতুতে তা হয়তো ২৩০০ থেকে ২৪০০ টাকা হবে। তাহলে বাড়বে ৬০০ টাকা। এক্ষেত্রে জনপ্রতি হয়তো ২০ টাকা করে বাড়তে পারে।
ঈগল পরিবহনের চালক আল আমিন বলেন, ১৫-১৬ বছর ধরে গ্রীণ লাইনের এসি বাস চালাই। দেশের উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ সব জায়গায়ই গাড়ি চালিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী দেশের যে উন্নয়ন করেছেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সব উন্নয়নকে ছাপিয়ে গেছে পদ্মা সেতু। এই সেতুর কারণে এখন নতুন নতুন গাড়ি যাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।
তিনি বলেন, আগে লোকজন বলত, সব পুরোনো, ভাঙ্গাচুরা গাড়ি যেত দক্ষিণে। সেতু হয়ে যাওয়ায় এখন নতুন আর দোতলা বাস যাবে।
চালক শাহাজান বলেন, বছরে পর বছর কষ্ট করে আসছি। একটা ট্রিপ নিয়ে ঘাটে আসার পর দ্বিতীয় ট্রিপ দিতে মন চাইতো না। আবহাওয়া যাই থাক, ঘাট পাড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেই হতো। সেই দিনের অবসান ঘটছে পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে।
চালক মোল্লা বলছিলেন, তিনি গাড়ি চালান ঢাকা-খুলনা-সাতক্ষীরা রোডে কিন্তু গাড়ি চালাতে গিয়ে যেন জীবনটাই শেষ হয়ে যেত। এতো কষ্ট বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এখন মনে হচ্ছে সব কিছু পানির হয়েছে। এই তো আর তিন দিন পরই সেতু ওপর দিয়ে গাড়ি চালব। সেদিনের অনুভূতিটা যে কেমন হবে, তা আপনাকে বলে শেষ করতে পারব না।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কথা শুনে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষকে নিরাপদে ও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে নতুন নতুন পরিবহন নামছে। ইমাদ পরিবহন, শ্যামলী, গ্রীণ লাইন, সাকুরা, ইউনিক, হানিফ ও এনা পরিবহনসহ আরও অনেক নতুন বাস নামছে যাত্রীসেবা দিতে।
প্রসঙ্গত, ২৬ জুন থেকে যানবাহনের জন্য পদ্মা সেতু চালু হবে। ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার মানুষের একটি মুক্তির পথ বলে দাবি করছেন অনেকেই।