ঢাকা: সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়ি সংক্রান্ত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ -রাজউকের প্রতিবেদন নিয়ে দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রিটকারী আইনজীবী সায়েদুল হক সুমনকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে অবিলম্বে এসব ভিডিও সরাতে বলেছেন আদালত। সেই সঙ্গে বিচারাধীন রুল নিষ্পত্তি পর্যন্ত মামলার বিষয়বস্তুকে (অন মেরিটে) প্রভাবিত করে এমন ভিডিও তৈরি ও প্রচার না করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সুমনকে।

ভিডিও অপসারণের আবেদনের শুনানির পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

আদালতে সালাম মুর্শেদীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, সাঈদ আহমেদ রাজা। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। রাজউকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জাকির হোসেন মাসুদ। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান।

আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বাড়ি সংক্রান্ত রাজউকের প্রতিবেদন নিয়ে দুটি ভিডিওি প্রচার করেছিলাম আমার ফেসবুক পেইজে। ওই দুটি ভিডিও অবিলম্বে অপসারণ করতে বলেছেন আদালত। আর মামলার মেরিট (বিষয়বস্তুকে প্রভাবিত) টাচ করে এমন ভিডিও না করতে এবং প্রচার না করতেও নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখিত আদেশ পাওয়ার আগেই ভিডিও দুটি অপসারণ করে ফেলব।

এর আগে গত ১ ডিসেম্বর আদালত এ মামলার বিষয়বস্তুকে (অন মেরিটে) প্রভাবিত করে, এমন নিউজ বা প্রতিবেদন না করতে সংবাদমাধ্যমকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে গুলশানে পরিত্যক্ত বাড়ি দখলের অভিযোগ এনে তা তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গত বছর ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
আব্দুস সালাম মুর্শেদী এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ছিলেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ২০১৮ সালে তিনি খুলনা-৪ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন।

সুমনের রিটে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-২-এর ১০৪ নম্বর সড়কে সি ই এন (ডি)-২৭-এর ২৯ নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত বাড়ি হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু আব্দুস সালাম মুর্শেদী বাড়িটি দখল করে বসবাস করছেন।

এ দাবির পক্ষে আইনজীবী সুমন তার রিট আবেদনে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি ও চলতি বছরের ৪ জুলাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানকে দেওয়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করেন।

এ রিটের শুনানির পর গত বছর ১ নভেম্বর রুলসহ আদেশ দেন আদালত। আব্দুস সালাম মুর্শেদী, গণপূর্তসচিব ও রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে এ বাড়ি সংক্রান্ত যাবতীয় নথি চান আদালত। ১০ দিনের মধ্যে নথি হলফনামা করে আদালতে দাখিল করতে বরা হয়।

আর রুলে জানতে চাওয়া হয়, পরিত্যক্ত বাড়ি দখলের কারণে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, দুদক চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও আব্দুস সালাম মুর্শেদীর কাছে রুলের জবাব চান আদালত।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি এ রুলটি শুনানির জন্য রাখা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।