ঢাকা: দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে জামিন দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ১০ বছর দণ্ডের বিরুদ্ধে হাজী সেলিমকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।  

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। আদালতে হাজী সেলিমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।

 

দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

 

আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়ে আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত এ সংসদ সদস্যকে জামিন দিয়েছেন আদালত। ’ 

উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২২ মে ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে হাজী সেলিম জামিন আবেদন করেন। বিচারক শহীদুল ইসলাম তা নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাঁকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তাঁকে কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরে গত ২৪ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) চেয়ে আবেদন করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। তাঁর সঙ্গে জামিন চেয়েও আবেদন করেন তিনি। সে আবেদনের শুনানির পর তা আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। সেই ধারাবাহিকতায় গত ১ আগস্ট তা আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানির পর আদালত হাজী সেলিমের জামিন আবেদনটি নথিভুক্ত করে রেখে দণ্ড বাতিল চাওয়া তাঁর লিভ টু আপিলটি (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির জন্য রাখা হয়েছিল।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালতের রায়ে তাঁকে মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর জ্ঞাত আয়বিহর্ভূত সম্পদ অর্জনে ‘সহযোগিতার’ দায়ে হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় দেওয়া হয় তিন বছরের কারাদণ্ড। এ রায়ের বিরেুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাজী সেলিম ও তাঁর স্ত্রী গুলশান আরা বেগম হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১৩ বছরের সাজা বাতিল করে রায় দেন।

হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সে নির্দেশনার আলোকে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুদক হাজী সেলিমের আপিল দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করে। সে আবেদনের শুনানি করে হাইকোর্ট ১১ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতের নথি তলব করেন। নথি আসার পর আপিলের শুনানি করে গত বছর ৯ মার্চ ফের রায় ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত।

রায়ে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের আপিল সংশোধন করে (আংশিক গ্রহণ ও আংশিক খারিজ) দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এর ২৬ (২) ধারাসংক্রান্ত আপিল গ্রহণ-অর্থাৎ তাকে খালাস দেওয়া হয়। আর একই আইনের ২৭ (১) এ আপিলের অংশ খারিজ করে ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখেন।