ঢাকা: এ মুহূর্তে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকের জন্য ভারত প্রস্তুত নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘দুই দেশ পাশাপাশি থাকলে সমস্যা থাকে, তার সমাধানও থাকে। তবে সুখের বিষয় হচ্ছে ভারত সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা বা উত্তেজনা না হয়।’

আজ বুধবার বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্মরণ সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ সব কথা বলেন তিনি।

 

আগামী ১৯ জুন নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত সপ্তম যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকের বিষয়ে এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের যেসব অমীমাংসিত ইস্যু আছে, সেগুলো নিয়ে আলাপ হবে। বাংলাদেশের পাটের ওপর ডাম্পিং তুলে নেওয়া, নদী, সীমান্তসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ হবে। এর মধ্যে নতুন একটি বিষয় এসেছে, সেটি হচ্ছে—আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে আলাপ করব। সেই সঙ্গে পূর্বের বিষয়গুলোও থাকবে।’ এ সময় আলাপের পরিধি অনেক বড় বলেও জানান তিনি। 

ভারত থেকে গম আমদানি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে গম আমদানিতে ভারত রাজি হয়েছে, অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশে যদি কোনো বেসরকারি লোক আনতে চান তারাও পারবেন। তবে তাঁরা সেটা তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবেন না।’ 

যৌথ নদী কমিশন–জেআরসি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জেআরসির মিটিং হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম। আসামে তাঁদের সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। জেআরসির বৈঠকের জন্য ভারত প্রস্তুত না।’ জেসিসি বৈঠকের আগে জেআরসির বৈঠক না হলেও পানি বণ্টন ইস্যুতে আলোচনা হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো নদী নিয়ে আলাপ আছে। ফেনী আছে, কুশিয়ারা আছে, সেগুলো নিয়ে আলাপ করব। জেআরসি না হলেও আগেও আলাপ করেছি, এবারও আলাপ করব।’ 

মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বৈঠকের বিষয়ে এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘তিন বছর পরে আমাদের বৈঠক হয়েছে। ২০১৭ সালে সিদ্ধান্ত হয়েছিল রোহিঙ্গাদের একটি দলের প্রত্যাবাসনের, সেটি হয়নি। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ ও ২০১৯–এ প্রত্যাবাসনের কথা ছিল, যায়নি। এবার আমরা একটি মডেল আকারে পদক্ষেপ নিতে চাই। তবে প্রত্যাবাসনের দিন–তারিখ কিছুই ঠিক হয়নি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘আরেকটি বড় ইস্যু বৈঠকে আলোচনায় ছিল যে—বাংলাদেশ প্রায় ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছে যাচাই-বাছাই করার জন্য। এর মধ্যে মাত্র ৫৮ হাজার যাচাই-বাছাই করেছে মিয়ানমার। বৈঠকে বাংলাদেশ দাবি জানিয়েছে যাচাই-বাছাই তাড়াতাড়ি করার জন্য।’ 
 
প্রত্যাবাসন কি এ বছর শুরু হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। কখন হবে, তার দিন–তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।’ 

প্রসঙ্গত, আগামী ১৯ জুন নয়াদিল্লিতে জেসিসি বৈঠকে যোগ দিতে ১৮ জুন রাতে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। সপ্তম জেসিসি বৈঠকে ঢাকার পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও নয়াদিল্লির পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নেতৃত্ব দেবেন। এতে দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এর আগে, ২০১২ সালে নয়াদিল্লিতে প্রথম জেসিসি বৈঠকে বসে বাংলাদেশ-ভারত। গত ১০ বছরে মোট ছয়বার জেসিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ, ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যে জেসিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ভার্চ্যুয়ালি।