ঢাকা: নানা আয়োজনে অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফকে স্মরণ করা হলো। ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজিমপুর কবরস্থানে তার কবরে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আজ সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে মেয়র মোহাম্মদ হানিফের কবরে শ্রদ্ধা জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। পরে কবরস্থান সংলগ্ন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দোয়া অনুষ্ঠানে মেয়র হানিফকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। এ সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আজিমপুর কবরস্থান সংলগ্ন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন। দোয়া অনুষ্ঠানে বাবার স্মৃতিচারণ করে দেশবাসীর কাছে দোয়া চান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
সাঈদ খোকন বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তিনি ঢাকার মানুষের কল্যাণে সারাজীবন কাজ করে গেছেন। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আমিও বাবার আদর্শ লালন করে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে থেকে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। এখন আমিও বাবার মতো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে লালন করে সুখে-দুঃখে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার পাশে থেকে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে চাই।
দুপুর সাড়ে ১২টায় পুরান ঢাকার বংশালের নাজিরাবাজারে মেয়র হানিফের নিজ বাড়িতে পৃথক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এ দোয়া মাহফিলেও ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন অংশ নেন।
১৯৪৪ সালে ১ এপ্রিল পুরান ঢাকার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মেয়র হানিফ। আবদুল আজিজ ও মুন্নি বেগম দম্পতির ছোট ছেলে তিনি। আদর করে সবাই তাকে ‘ধনী’ নামে ডাকতেন। শিশু হানিফ ছোটবেলায় মমতাময়ী মাকে হারান। মায়ের মৃত্যুর পর ফুফু আছিয়া খাতুনের কাছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য আর আদর্শে বেড়ে ওঠেন।
ঢাকার প্রখ্যাত পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আলহাজ মাজেদ সরদার ছিলেন ঢাকার শেষ সরদার। মোহাম্মদ হানিফের বহুমুখী প্রতিভা তাকে মুগ্ধ করে। তাই ১৯৬৭ সালে মাজেদ সরদার প্রিয়কন্যা ফাতেমা খাতুনকে হানিফের সঙ্গে বিয়ে দেন।
এই দম্পতির এক ছেলে ও দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। ছেলে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাবার আদর্শ ধারণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পাওয়া মোহাম্মদ হানিফ ১৯৯৪ সালে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ঢাকার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গিয়ে মারাত্মক আহত হন মোহাম্মদ হানিফ। ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তাঙ্গনে এক সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি তিনি।
২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাতে ৬২ বছর বয়সে ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মোহাম্মদ হানিফ।