ঢাকা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সিট খালি থাকে, অথচ বুকিং দেওয়ার সময় সিট পাওয়া যায় না—এই অভিযোগ অনেক দিনের। তবে এবার ১৫ মিনিটের কারসাজির জন্য সিট খালি থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থাটির ক্ষতি হয়েছে ৪৩ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪৪ লাখ টাকা)। অনিয়মের এই ঘটনা ঘটেছে জেদ্দা এবং মদিনা রুটে। যে রুটে প্রবাসী কর্মী ও ওমরাহসহ নানা কারণে সব সময় টিকিটের বিপুল চাহিদা থাকে।
ব্যস্ত এই রুটে টিকিট কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (অ্যাটাব)।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম এই গন্তব্যে কয়েক গুণ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী কর্মীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে সরকার পথ খুঁজছে, কিভাবে ভাড়া কমানো যায়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তৎপরতায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে ভাড়া কমানোর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছে। তবে বিমানের অসাধু কর্মকর্তাদের অনিয়ম সরকারের উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
যেভাবে টিকিট কারসাজি : বিমানের শীর্ষ বিপণন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট বিক্রির ঘোষণার ১৫ মিনিটের মধ্যে ঢাকা-জেদ্দা রুটের ফ্লাইটের সব টিকিট বুক করে ফেলে। তবে ২৬৮টি আসনের বিপরীতে ৮০০টি বুকিং পড়লেও গত ১৯ সেপ্টেম্বর ৪৩টি আসন খালি নিয়ে ওই ফ্লাইটটি যাত্রা করে।
বিজি১৮০২ ফ্লাইটটি পরে ভিআইপি যাত্রীদের বহন করতে জেদ্দা থেকে লন্ডন হয়ে নিউ ইয়র্কে যায়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিমানের বিপণন বিভাগের তথ্যানুসারে, ঢাকা-জেদ্দা রুটের প্রতিটি টিকিটের মূল্য ছিল এক হাজার ডলার।
বিমানের অনুমোদিত যেসব ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট পায়নি, তাদের অভিযোগ, আটটি টিকিট এজেন্সি বিমানের বিপণন মহাব্যবস্থাপক এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ ছয়জন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ১৫ মিনিটের মধ্যে সব টিকিট বুক করে রাখে। তবে শেষ পর্যন্ত বুকিং নিশ্চিত করা যায়নি বলে ওই ফ্লাইটের ৪৩টি আসন খালি থেকে যায়। অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর মধ্যে রয়েছে খান ট্রাভেল, রয়্যাল ট্রাভেল, খাজা এয়ারলাইনার এবং গালফ ট্রাভেল।
ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন আটাবের সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ গতকাল বলেন, ‘বিমানের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিংয়ের মধ্যে একটি গ্রুপ আছে, যাদের পরামর্শে কিছু ট্রাভেল এজেন্সি সিট বুকিং করে রাখায় সাধারণ যাত্রীরা টিকিট পান না। ফলে সিট খালি যায়। যারা এই অনিয়মে জড়িত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। আমাদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে যদি এ কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। ’
রাজধানীর একাধিক ট্রাভেল এজেন্ট জানায়, জেদ্দা রুটে আসন পাওয়া খুব দুষ্কর। ঢাকা থেকে এই গন্তব্যে ১৬ ডিসেম্বরের আগে কোনো সিট খালি নেই। ১৬ ডিসেম্বরের পরের তারিখগুলোয় বিমানের জেদ্দা রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া এক লাখ সাত হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে আঞ্চলিক অফিসে চিঠি : টিকিট কেলেঙ্কারির এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিমানের বিপণন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন তড়িঘড়ি করে এক চিঠিতে ওই রুটে অগ্রিম যাত্রী থাকার কথা জানিয়েছিলেন উল্লেখ করে বিমানের আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের দোষারোপ করেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, তাঁদের জেদ্দা রুটে যাত্রী সরবরাহ করার কথা ছিল। তবে চিঠির জবাবে আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলেছেন, বিমানের প্রধান কার্যালয় বা বিপণন বিভাগ তাঁদের এই ধরনের কোনো আগাম নির্দেশনা দেয়নি।
ঘটনার সত্যতা শিকার করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. যাহিদ হোসেন গতকাল বলেন, ‘এটা ভিভিআইপি পজিশনিং ফ্লাইট ছিল। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। ’
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘বিমান ভাল চলুক, আমরা চাই। অন্যরা যেভাবে বিমানে যাত্রী হিসেবে ভ্রমণ করে, আমিও করি। বিমান বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। আমরা চাই, বিমানে দুর্নীতি চিরতরে বন্ধ হোক। ’