ঢাকা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে একটি দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে। কিন্তু প্রচার রয়েছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী নেতারাই দলের কম পরিচিত নেতাদের দিয়ে বিডিপি গঠন করেছেন।

আজ বুধবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে দলটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে এ আবেদন জমা দেন। এতে দলের জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে স্বাক্ষর রয়েছে মো. কাজী নিজামুল হকের।

 

তিনি জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কর্মপরিষদ সদস্য এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতা বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

 

আবেদন জমা দেওয়ার পর অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিডিপির নিবন্ধনের জন্য যতগুলো শর্ত আছে সবকিছু পূরণ করেই আবেদন জমা দিতে এসেছি। আশাকরি আমরা ইসিতে নিবন্ধিত হব এবং আমরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হব।

তিনি বলেন, আমার সঙ্গে নতুন প্রজন্মের যারা আছেন তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা। আমরা ইনশাআল্লাহ আরেকটু অরগানাইজড হয়ে আপনাদের সাথে দলের উদ্দেশ্য, আদর্শ সবকিছু নিয়ে বিস্তারিত কথা বলব।

তিনি বলেন, আমরা নিবন্ধনের জন্য এসেছি। নিবন্ধনের যতগুলো রিকয়ারমেন্ট আছে সবগুলো ফুলফিল করে জমা দিয়েছি। প্রায় ৫০ হাজার পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট এনেছি।

জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এটা ভুল। যা আছে আমরা পরে পরিস্কার করব। ভুল কথা অনেকেই বলতে পারেন। এটা একটা নতুন দল। আমার সঙ্গে যারা আছেন তারা নতুন প্রজন্মের। বিভিন্নভাবে তাদের সংগ্রহ করছি। এখানে কারো কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি বা সহিযোগিতা ফিল করি না। এখন কেউ যদি কিছু বলে আমরা এজন্য দায়ী নয়। বিনীতভাবে আপনাদের কাছে আবেদন, বিস্তারিতভাবে আমরা বলব। আমরা সম্পূর্ণ নতুন একটা দল। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা নাই।

আপনি ডেমরা থানা জামায়াতের আমির ছিলেন কি-না- এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, আমি ডেমরা চিনিই না।

দলটি কবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং আদর্শ উদ্দেশ্য কী এ প্রশ্নে তিনি বলেন, পরবর্তীতে আমরা বিস্তারিত জানাব। এখন কিছুই বলতে চাচ্ছি না। আমি সবই আপনাদের বলব।

বাংলাদেশের সংবিধান ও জাতির পিতা মানেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান মেনেই আমরা রাজনীতিতে এসেছি। সংবিধানের প্রতিটি শব্দকেই আমরা সম্মান করি এবং সেটাকে লালন করেই আমরা রাজনীতি করি। বঙ্গবন্ধু তো জাতির পিতা। বাংলাদেশের সংবিধানের বাইরে যেতে আমরা রাজি না। আমাদের গঠনতন্ত্র দেখলে বুঝবেন। আর এখানে মুক্তিযুদ্ধে পর জন্ম নেওয়ার বিভিন্ন জায়গায় উদ্যোক্তা যারা আছেন, তাদের নিয়েই দল গঠন করা হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধী কেউ দলে আছে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিডিপি সভাপতি আরো বলেন, স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছে, যুদ্ধাপরাধী বানাইলে বানাইতে পারেন। আমরা এসব বিষয়ে যাব কেন? আমরা একটা রাজনৈতিক দল। ইনশাআল্লাহ সামনে সকল কিছু পরিস্কার হবে।

বিডিপির আবেদন জমা দেওয়ার আগে বুধবার সকালে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, শর্ত পূরণ করে ভিন্ন নামে জামায়াত ইসির নিবন্ধন পেতে পারে। জামায়াতের কেউ যদি যুদ্ধাপরাধী না হয় এবং তাদের গঠনতন্ত্র যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়, তাহলে শর্ত পূরণ করে ভিন্ন নামে তাদের নিবন্ধন পেতে কোনো বাধা নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক গঠনতন্ত্র নিয়ে কেউ আবেদন করলে তাদের নিবন্ধন দেবে না কমিশন।

এর আগে চলতি বছরের ২৯ আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আদালতের আদেশে বাতিল হয়েছে। তাই ওই দলের ব্যক্তিরা ভিন্ন নামে আবেদন করলেও নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ নেই। অবশ্য আদালত কোনো আদেশ দিলে ভিন্ন কথা। সে আদেশ মানতে হবে।