যৌন হয়রানি ও নিপীড়নসহ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী পৃথক আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। রোববার (১২ জুন) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে সহিংসতার শিকার হন এক নারী গণমাধ্যমকর্মী। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ করে সংগঠনটি।
বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করেন মহিলা পরিষদের নেতারা। তারা বলেন, বারবার আন্দোলনের পরও এ ধরনের ঘটনাগুলো থামছে না। কারণ এত সব ঘটনা ঘটার পরও বিচার হচ্ছে না। যদি আমরা এগুলোর সঠিক বিচার করতে পারতাম, তাহলে এগুলো আর ঘটত না। আজ বাংলাদেশ নারী পরজীবী কোনো শ্রেণি নয়, সে এখন স্বাবলম্বী। সুতরাং সরকারের এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
সংগঠনের সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বিরুদ্ধে মহিলা পরিষদ সব সময় আন্দোলন করে আসছে। করোনার সময় থেকে সহিংসতা বাড়তে বাড়তে আজ এ পর্যায়ে। করোনা থেকে আমরা মুক্তি পেলেও নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে মুক্ত হতে পারছি না। যারা নারী প্রতি সহিংসতার মাধ্যমে পৌরুষ দেখান, তারা আসলে পুরুষত্বকে কলঙ্কিত করছেন, মানবিক আচরণ না করে মানবতাকে কলঙ্কিত করছেন। সব পুরুষ নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করেন না, নারীকে অসম্মানের, অমর্যাদার চোখে দেখেন না। কিন্তু যারা দেখেন, তাদের গোটা কয়েক পুরুষের জন্য সবাই অপরাধের মুখে পড়ে যাচ্ছেন। কাজেই তাদের চিহ্নিত করার যে সংগ্রাম, আইনের আওতায় আনার যে সংগ্রাম, তা শুধু নারীর নয়, নারী-পুরুষ সবার।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরব উজ্জ্বল কেন্দ্র। আমরা যখন ছাত্র আন্দোলন করেছি, তখন রাত ১২,১টা দিকেও সার্জেন্ট জহুরুল হক হল থেকে একা ফিরেছি, কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমরা বাহির থেকে যখন ক্যাম্পাসের চত্বরে ফিরেছি, তখন মনে হতো আমরা নিরাপদ জায়গায় আছি। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এই ধরনের কাজ করছে, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাদের চিহ্নিত করুন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান আপনার সম্মানের সাথে জড়িত। এসময় তিনি শিক্ষক,শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কে সহিংসতাকারীদের হাত থেকে ক্যাম্পাসকে মুক্ত রাখার আহ্বান জানান।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আজ বাংলাদেশের নারীদের অবদান দেশে বিদেশে স্বীকৃত। কোন ধরনের শিক্ষার ফলে ওই কাপুরুষ নারীর প্রতি এ ধরনের সহিংসতা দেখায়? আমরা বলছি পুরুষ নতুন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করুন, নতুন ধরনের মানুষ হন। একজন নারীকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করুন। সে আপনার অধীনস্থ না- এই শিক্ষায় আপনারা শিক্ষিত হোন। যদি তা না হয় তাহলে আপনার পরিবারেও একই ঘটনা ঘটবে। সব মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তি নারীর সাজসজ্জা, পোশাকের ওপর হস্তক্ষেপ করতে চায়, করতে শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন সমাজকে দৃষ্টি দিতে হবে।
এ সময় মহিলা পরিষদ ১১টি প্রস্তাব পেশ করে। প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের আন্দোলন উপ-পরিষদের অ্যাডভোকেসি লবির পরিচালক জনা গোস্বামী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- অবিলম্বে নির্যাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা, নারী ও কন্যার প্রতি যৌন নিপীড়নসহ সব সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করা, উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, এসিড নিক্ষেপের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা, নারীর স্বাধীন চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত ইত্যাদি।