এশিয়ার দেশগুলো ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সমৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাপানের টোকিওতে ‘নিক্কেই ফোরাম: ৩০তম ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলন-২০২৫’এ মূল বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

এই নতুন সম্ভাবনা উন্মোচনায় এ সময় তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রথমত, এশিয়ার আন্তঃনির্ভরশীলতাকে সহযোগিতায় রূপান্তর করা। অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈচিত্র্য আমাদের শক্তি, একই সঙ্গে একটি পরীক্ষা।

তিনি বলেন, আমাদের ভাগ্য একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এক দেশে সাপ্লাই চেইনের বিঘ্ন অন্য দেশের ওপরও প্রভাব ফেলে। এক অঞ্চলের পরিবেশগত ক্ষতি অন্য অঞ্চলের বৃষ্টির প্যাটার্নকে প্রভাবিত করে। আমাদের কাজ হলো এই আন্তঃনির্ভরশীলতাকে সহযোগিতায় রূপান্তর করা—সহযোগিতার মাধ্যমে যৌথ সমৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করা, শূন্য-যোগফল প্রতিযোগিতায় নয়।

 

দ্বিতীয়ত, শক্তিশালী অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা গড়ে তোলা। এশিয়ার উন্নয়ন অর্থায়নের জন্য টেকসই ও শক্তিশালী পদ্ধতি প্রয়োজন। আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নেতৃত্ব নিতে হবে। এশিয়া এখনো বিশ্বের সবচেয়ে কম সংযুক্ত অঞ্চলগুলোর একটি। এই দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়ের সুযোগ সীমিত করে রাখে।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের অবিলম্বে আঞ্চলিক বাণিজ্য অংশীদারত্ব উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে—যা অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য এবং টেকসই।

তৃতীয়ত, অন্তর্ভুক্তি, ক্ষমতায়ন এবং টেকসই অবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যারা এখনো প্রান্তিক অবস্থায় রয়েছে, অবকাঠামো ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত এবং ঝুঁকিতে রয়েছে; আমরা যেন তাদের কথা ভুলে না যাই।

 

 

 

তিনি বলেন, আমার জীবনের কাজ দেখিয়েছে, দারিদ্র্য গরিব মানুষ তৈরি করে না, বরং একটি ব্যবস্থা তৈরি করে। আমাদের সেই ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে। আমরা যে বিশ্ব পেয়েছি, তা তৈরি হয়েছে ট্রিকল-ডাউন অর্থনীতি, কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ এবং মুনাফা সর্বাধিককরণের ভিত্তিতে। আমাদের একটি নতুন স্থাপত্য তৈরি করতে হবে—যেখানে অন্তর্ভুক্তি, ক্ষমতায়ন এবং টেকসই অবস্থা প্রতিটি স্তরে অগ্রাধিকার পাবে। এশিয়া এই নেতৃত্ব দিতে পারে।