সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, দেশে আট কোটি শ্রমজীবী মানুষ। তাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ বা ৭ কোটি শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নেই। কমিটি এই শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে।

পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী ডাটাবেজ তৈরি, শ্রম অসন্তোষ নিরসনের পাশাপাশি প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা ও শ্রমিক ফেডারেশনকে জবাবদিহির মধ্যে আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া জবাবদিহিমূলক শ্রম প্রশাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।

 

সোমবার (২১ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিক আহত বা নিহত হলে আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া, কম মজুরির শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষ সুপারিশ করেছে কমিশন। সেগুলো হলো- শ্রম আইনে মহিলা শব্দের পরিবর্তে নারী শব্দ ব্যবহার এবং কর্মক্ষেত্রে তুই/তুমি সম্বোধন বন্ধ করা।

 

দেশের শ্রমিকদের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ করেছে কমিশন। লক্ষ্য হলো, কোনো শ্রমিক যেন তারচেয়ে কম মজুরি না পান, তা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে পরিচয়পত্র দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, সেসব মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করারও কথাও বলেছে কমিশন।

শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত এবং তাদের দর-কষাকষি করার প্রক্রিয়া যেন আরও সহজ হয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি দূর করতে ২০০৯ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে কমিশন। সেই সঙ্গে নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার কথা বলা হয়েছে, যে সুপারিশ অন্যান্য কমিশনও করেছে।

 

শ্রমিকদের কল্যাণে সর্বজনীন তহবিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রম আদালতসহ আপিল বিভাগের সর্বক্ষেত্রে যেন বাংলা প্রচলন করা হয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী-পুরুষের সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জন্য সুপারিশসমূহের মধ্যে রয়েছে- রানা প্লাজা ও তাজরীন গার্মেন্টস ঘটনার বিচার দ্রুত শেষ করা, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে করা হয়রানিমূলক মামলা নিষ্পত্তি, নারী শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে।