বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহসহ ২৩ নাবিককে সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে ছাড়াতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথেই হাঁটছেন জাহাজ মালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। দস্যুরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেভাল ফোর্স ও সোমালিয়ার আঞ্চলিক পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক চাপে থাকলেও নাবিক ও জাহাজের নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের সরকার ও জাহাজ মালিকপক্ষ কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে নারাজ।
এরই মধ্যে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দস্যুদের সঙ্গে জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। সেই ধারা অব্যাহত রেখে জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে চান মালিক পক্ষসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরকারি সূত্র বলছে, জাহাজের মধ্যে থাকা বিপুল পরিমাণ কয়লা একটি দাহ্য পদার্থ। সেখানে এমন কিছু করা যাবে না যাতে করে দাহ্য পদার্থ হুমকির সম্মুখীন হয়।
নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী গতকাল শনিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহর দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যুদ্ধজাহাজ ও হেলিকপ্টার নজর রাখায় জলদস্যুরা মানসিকভাবে চাপে আছে। তবে দস্যু ও মালিকপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ করার মধ্য দিয়ে যে সুযোগের দ্বার উন্মোচন হয়েছিল তা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা চাই কোনো অভিযান নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধানের মধ্য দিয়ে নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনতে।
ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী জানান, জাহাজটি গত কয়েক দিন যেখানে ছিল এখনো সেখানেই আছে।
জাহাজ মালিক কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস. আর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহেরুল করিম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দস্যুরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। জাহাজ থেকে শুক্রবার নাবিকরা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা সবাই সুস্থ আছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আগ্রহ সত্ত্বেও ইউরোপীয়দের নজরদারির পাশাপাশি সোমালিয়ার পান্টল্যান্ডের নুগাল অঞ্চলের পুলিশ বাহিনী দস্যুদের আত্মসমর্পণের জন্য চরমপত্র দিয়েছে।
এদিকে গতকাল শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আর হরি কুমারকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি বলেছে, ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে ভারতীয় নৌবাহিনী। গাল্ফ অব এডেনে ভারতীয় নৌবাহিনীর অভিযান নিয়ে কথা বলার সময় তিনি এই বার্তা দেন।
অপহৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাহাজটির বিষয়ে নজর রাখছে ভারতীয় নৌবাহিনী।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নামে ভারত মহাসাগরের নামকরণ হয়েছে। আমরা ব্যবস্থা না নিলে, আর কে নেবে।’
প্রসঙ্গত, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। তখন থেকে চার দফা স্থান পরিবর্তন করে জাহাজটি এখন সোমালিয়ার সাগরসৈকত থেকে পৌনে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।