পাহাড়ের নিস্তব্ধতা, ঝাউবাগান পেরোনো বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ, স্থবির নীল আকাশ আর সমুদ্রের টানা গর্জনের সঙ্গে মিশতে যাচ্ছে ট্রেনের হুইসল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে ট্রেন। তবে যাত্রী নিয়ে বাণিজ্যিক ট্রেন কক্সবাজার থেকে চলবে ১ ডিসেম্বর। ঢাকা থেকে যাবে ২ ডিসেম্বর।

 

 

কক্সবাজারকে ট্রেন নেটওয়ার্কে যুক্ত করার ভাবনা ছিল ব্রিটিশদের, ১৮৯০ সালে। ১৩৩ বছর পর সেই ভাবনার বাস্তবায়ন হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে। বিনিয়োগ সংকট, ভূমি অধিগ্রহণ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো বড় বড় বাধা পেরিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে কক্সবাজার রেলপথ। 

আজ চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মীয়মাণ রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 
এর মাধ্যমে রেল পাচ্ছে আরো ১০০ কিলোমিটার নতুন পথ। 

 

প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ সকাল ১১টায় কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি ১৫টি কোচসংবলিত উদ্বোধনী ট্রেনে চড়ে রামু পর্যন্ত যাবেন। সেখান থেকে মহেশখালীতে আয়োজিত আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।

 
উদ্বোধন করবেন আরো কয়েকটি প্রকল্প।

 

কক্সবাজারের পথে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচলের দিন এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র কালের কণ্ঠকে বলেছে, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে একটি ট্রেন বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু করবে। সেই ট্রেনের নাম ও সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, শুরুতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রেন চলাচল করবে।

 

 

ধীরে ধীরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে আট জোড়া করা হবে। যাত্রীপ্রতি কিলোমিটার হিসেবে ট্রেনের যা ভাড়া আছে সেটি বিবেচনা করেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা-কক্সবাজার পথে ট্রেনের সর্বনিম্ন ভাড়া ১২৫ টাকা। আর সর্বোচ্চ ১৭২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন চট্টগ্রাম যায় তার সব কটিই কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে। সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকেও আলাদা ট্রেন কক্সবাজার পর্যন্ত চলাচল করবে বলে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার

নতুন এই পথে আন্ত নগর, লোকাল, কমিউটার—সব ধরনের ট্রেনই চলাচল করবে। ফলে শুধু ঢাকা বা দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গেই নয়, চট্টগ্রামের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগের নতুন পথ তৈরি হলো এতে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাণিজ্যিক চলাচলের জন্য যেসব প্রস্তুতি দরকার সেগুলো চলমান আছে। দ্রুতই সব গুছিয়ে এনে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।’ 

বর্তমানে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথের দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার। এর সঙ্গে কক্সবাজার যোগ হলে ঢাকা থেকে পুরো পথের মোট দূরত্ব দাঁড়াবে ৪৬০ কিলোমিটার। তবে ভাড়া নির্ধারণের সময় এ পথের দূরত্ব ৫৩৫ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। এই রেললাইনের মাধ্যমে ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে বাংলাদেশের।

নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যটকদের আগের চেয়ে বেশি আকৃষ্ট করবে কক্সবাজারের প্রতি। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ দ্রব্য পরিবহন করাও সম্ভব হবে এই পথে।

বেড়েছে সময়, ঋণ দিচ্ছে এডিবি

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) রেললাইনের নির্মাণ প্রকল্পের মূল অনুমোদন পায় ২০১০ সালের ৬ জুলাই। ২০১৭ সালে প্রকল্প নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ গত বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকার দিচ্ছে।

চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) প্রকল্পের নির্মাণকাজ করছে। বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও তমা কনস্ট্রাকশন কম্পানি তাদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।