ঢাকা: নিরস্ত্রীকরণ, ইউক্রেনের ‘ডিনাজিফিকেশন’ (নাৎসিকরণ বন্ধ করা), জোটনিরপেক্ষ অবস্থান এবং রাশিয়ার অংশ হিসেবে নতুন অঞ্চল এবং ক্রিমিয়ার স্বীকৃতি—বাংলাদেশ সফরে এসে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এই চার শর্ত তুলে ধরেছিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের সফরে গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তিনি ঢাকায় আসেন। সন্ধ্যায় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর সকালে জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি যাত্রার প্রাক্কালে তিনি ঢাকায় গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
ঢাকায় রুশ দূতাবাস রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউক্রেনে তাদের বিশেষ সামরিক অভিযানের কারণ, বর্তমান পরিস্থিতি ও যুদ্ধ বন্ধের শর্তগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। এর আগে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার শর্তগুলো তুলে ধরার বিষয়টি এবারই প্রথম কোনো পক্ষ জানাল।
নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও এর পটভূমিতে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছেন, বিশ্বে এই চ্যালেঞ্জগুলোর প্রভাব পড়ছে।
ঢাকায় রাশিয়া দূতাবাস রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের বাংলাদেশের সফরের দিনই এ দেশের একটি ইংরেজি সংবাদপত্রে ১৪ জন পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতের যৌথ নিবন্ধের সমালোচনা করেছে। রাশিয়া দূতাবাস বলেছে, জোরালো কোনো প্রমাণ ছাড়াই ওই নিবন্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে ‘আগ্রাসন’, ‘আক্রমণ’ ও ‘অবৈধ যুদ্ধের’ অভিযোগ তোলা হয়েছে। ওই ১৪ পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতের মতে, রাশিয়ার অভিযানের ফলে বিশ্বে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হয়েছে। এর ফলে বৈশ্বিক নিরাপত্তা কাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
ঢাকায় রাশিয়া দূতাবাস বলেছে, জাতিসংঘ সনদের ৫১ ধারা অনুযায়ী (সপ্তম অধ্যায়) অনুযায়ী, রাশিয়ার ফেডারেশন কাউন্সিলের অনুমতি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী দোনেৎস্ক ও গণপ্রজাতন্ত্রী লুহানস্কের সঙ্গে চুক্তি ও অনুমোদনের আলোকে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে। রাশিয়া বলেছে, ২০১৪ সালে রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর ইউক্রেনে সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ইউক্রেন নাৎসিব্যবস্থার ভিত্তিতে তার দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে বসবাসরত পরিচয়, শিল্প, ঐতিহ্যসহ সব অগ্রাহ্য করা শুরু করে। রাশিয়া বিশেষ অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনের নব্য নাৎসিরা আবাসিক ভবনগুলোতে হামলা শুরু করে।
রাশিয়া দূতাবাস অভিযোগ করেছে, পশ্চিমা দেশগুলোই খাদ্যকে যুদ্ধের অস্ত্রে পরিণত করেছে।
জাপানের হিরোশিমা থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পশ্চিমাদের মানবতার জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন অস্ত্র ও কৌশল প্রয়োগের উদাহরণ তুলে ধরেছে রাশিয়া দূতাবাস। তারা আরো বলেছে, পশ্চিমা প্রভাব বলয় সৃষ্টির জন্য ন্যাটো বিভিন্ন দেশের ক্ষতি করছে।
রাশিয়া দূতাবাস বলেছে, বাংলাদেশিদের চোখে রাশিয়াকে কলঙ্কিত করার পশ্চিমা চেষ্টা সফল হবে না। রাশিয়া বাংলাদেশের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবেই থাকবে।