ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদ কার্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি জানান, নির্বাচনের ফলাফল যেন সব ভোটার ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয়, অর্থাৎ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য সব কার্যক্রম সংবিধান, আইন, বিধি অনুযায়ী নেওয়া এবং যথাযথ প্রয়োগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। 

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি আরো জানান, নির্বাচন কমিশন সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর।

নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখার জন্য ইসি নির্বাচন সংক্রান্ত সব কার্যক্রম সবার অবগতির জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ, পর্যাপ্ত সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মীদের অবাধে সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

আইনমন্ত্রী জানান, সংসদ নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব প্রার্থীর প্রতি সম-আচরণ, নির্বাচন কমিশনের অধিক সংখ্যক যোগ্য কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ, নিরপেক্ষ প্রিজাইডিং-সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী কারো বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি, নির্বাচনী আইন ও বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, নির্বাচন পূর্ববর্তী, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচন পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূলে রাখা, নির্বাহী ম্যাজিট্রেট প্রার্থী বা সমর্থক যেন নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করা, আইন ও বিধি অমান্যকারীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা করা, সব প্রার্থীকে আচরণবিধি অনুসারে নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ তৈরিসহ সম্ভাব্য সব কার্যক্রম নিয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আনিসুল হক জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা থাকায় নির্বাচন কমিশন সে লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কমিশন এরই মধ্যে সুধীসমাজ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছে।

এ ছাড়া সংবিধান, আরপিও, মতবিনিময়সভার আলোচনা, প্রচলিত বিভিন্ন আইন ও বাস্তবতার নিরিখে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কমিশন তৎপর রয়েছে। 

 

প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগ 

প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকগণের প্রবাসেই ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে ১৬টি দেশে কার্যক্রম পরিচলনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবাসেই ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গত মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পরীক্ষামূলকভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে। এ পর্যন্ত ৩৩৬ জন প্রবাসীর জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) প্রদান করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত চার হাজার ৩৫৭ জন প্রবাসী ভোটারের বায়োমেট্রিক গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার ৫৫৯ জন যোগ্য ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রক্রিয়াধীন।

 

আইন মন্ত্রী জানান, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে ১৫টি দেশের নিবন্ধন কার্যক্রম অকার প্রস্তাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও ইতালির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়া গেছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে সৌদি আরব এবং ৯ অক্টোবর থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসীদের নিবন্ধনের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন ও বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদের সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করা হচ্ছে।

এ ছাড়া কুয়েত, কাতার ও মালয়েশিয়ার ভোটার নিবন্ধন শুরুর প্রস্তাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।