ঢাকা: চীনকে ইঙ্গিত করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বলেছে, তারা এ অঞ্চলে বিশেষ কোনো দেশের আধিপত্য চায় না। গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিরা রেসনিক ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান। 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেসনিক ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করার পর সাংবাদিকরা জানতে চান, ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে। জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সাদৃশ্য আছে।

আমরা অবাধ চলাচলের কথা বলেছি। তারাও (যুক্তরাষ্ট্র) চায় না, বিশেষ কোনো দেশ এখানে আধিপত্য বিস্তার করুক বা অবাধ চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়াক।’

 

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় দক্ষিণ চীন সাগরে ‘অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা’ চর্চা করতে গিয়ে চীনের বাধার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছে। এ বছরের ২৪ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর জানিয়েছে, মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মিলিউস দক্ষিণ চীন সাগরে পার্সেল দ্বীপপুঞ্জের কাছে অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা চর্চা করেছে।

এর এক দিন আগে চীন দাবি করেছিল, তারা জাহাজটিকে তাদের রাষ্ট্রীয় জলসীমায় তাড়া করেছিল। 

 

এদিকে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিরা রেসনিককে বলেছেন, প্রস্তাবিত ‘অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসেস অ্যাগিমেন্ট (আকসা)’ এবং ‘জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি সার্ভিসেস অ্যাগ্রিমেন্টের (জিসোমিয়া)’ মতো মৌলিক সামরিক চুক্তিগুলোর বিষয়ে ভবিষ্যতে বিবেচনা করা হবে। 
পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তার সাক্ষাতের আগে গতকাল সকালে ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। 
সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেসনিক।

অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকাস অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম। এ বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সহনশীলতা না দেখানোর নীতি তুলে ধরে এটি বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছে।

 

এদিকে পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতে মিরা রেসনিক বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। পররাষ্ট্রসচিব সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

 

 

পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ২০২২ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপের ধারাবাহিকতায় এবার ঢাকায় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সংলাপে পুরোপুরি প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিষয়গুলো ছাড়া নিরাপত্তা ইস্যু, যেমন—সাইবার নিরাপত্তা, পরিবেশ, জ্বালানি নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবাধিকার নিয়ে ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির সঙ্গে সব ধরনের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুও আছে। তাঁরা চান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক যেন আরো গভীর হয়। আর এটি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রেই। সচিব বলেন, ‘আমরাও চাইছি তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) সঙ্গে সম্পর্কে যেন কোনো দূরত্ব না থাকে।’ তিনি বলেন, ‘সব ব্যাপারে আমাদের যে একমত হতে হবে তা নয়। তবে আমাদের প্রেক্ষাপট আমরা তুলে ধরতে পারি।’

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রীও সে কথা বলেছেন। এখন নির্বাচন কমিশন বাকি কাজগুলো করছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা লাগলে যুক্তরাষ্ট্র করবে বলেছেন মিরা রেসনিক।’ 

সচিব বলেন, ‘আমরা আরো জানিয়েছি, নির্বাচনের যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার তা হচ্ছে, দেখছি। রাজনৈতিক দল কে কী ভাবে—সেটা বলা যাচ্ছে না।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সরাসরি আকসু, জিসোমিয়া নিয়ে আলোচনা হয়নি। এটি প্রতিরক্ষা সংলাপের বিষয় ছিল। তবে আমরা বলেছি, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা একই ধরনের কাঠামো নিয়ে কাজ করছি।’

তিনি বলেন, ‘জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিতে উন্নীত হয়েছে। জাপানও আমাদের সরকারি সহায়তার আওতায় নিরাপত্তা সহযোগিতা দেওয়ার জন্য নির্বাচন করেছে। সুতরাং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়েরও বিষয় আছে। আগামী দিনে হয়তো এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আলোচনা হবে।’ 

র‌্যাবের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিটি প্রতিবেদন ও অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। এ দেশে দায়মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। এ দেশের প্রতিটি বাহিনীর ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)’ আছে। একটি গুলি খরচ করলেও জবাবদিহি করতে হয়। 

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, যেকোনো দুর্ঘটনায় সব সময় সরকার জড়িত থাকে তা নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি যে গাজীপুরে একজন শ্রমিক নেতা মারা গেলেন। সেখানে তো সরকারের কিছু করার নেই। তবে শেষ পর্যন্ত আমাদের তো জবাবদিহির বিষয় থাকে।’ 

সচিব বলেন, ‘আমাদের ১৭ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ। সেখানে তো এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আমাদের বাহিনীর কেউ কিছু করলে এসওপি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। আমরা র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে লিখিতভাবে জবাব দিয়েছি। তাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে সেটি আছে। এ নিয়ে আমরা সজাগ আছি। এখানে দায়মুক্তির কোনো সুযোগ নেই।’