ঢাকা: বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরী আছেন যুক্তরাষ্ট্রে আর নূর চৌধুরী কানাডায়। দুজনই সেখানে আশ্রয় নিশ্চিত করেছেন। প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে অব্যাহত চেষ্টার পরও পলাতক ওই দুজনকে ফেরানোর বিষয়ে কার্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি। অন্য তিন খুনি খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাঁচ পলাতক খুনির অবস্থানের তথ্য দিতে পারলে সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির খবর আমরা জানি। একজন আমেরিকায় এবং আরেকজন কানাডায়। অন্যদের সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘আমরা অনেক চিঠিপত্র দিয়েছি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েও আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তাঁরা সব সময় বলেন, এ ইস্যুটা তাঁদের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে আছে।
কানাডায় অবস্থান করা খুনি নূর চৌধুরী প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানাডিয়ান সরকার তাঁকে ফেরত দিচ্ছে না। তারা ফাঁসির রায় কার্যকর করে এমন দেশে খুনিদের পাঠায় না।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “প্রবাসীদের বলব, খুনিরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপনারা খুনির বাড়ির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করেন। অন্তত মাসে একবার হলেও এটা ঘটা করে করেন, তাদের দেখলে বলেন, ‘খুনি যাচ্ছে।’ এতে তারা মনঃপীড়ায় পড়বে। ওখানকার সাংবাদিকদের নিয়ে আপনারা আন্দোলন করেন।” পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরাতে সরকার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, পলাতক পাঁচ খুনিসহ সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করেন। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। তৎকালীন সরকার খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে আইন করে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দায়মুক্তি আইন বাতিল এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু করে। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল এই মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে উচ্চ আদালত ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। খুনি আবদুল মাজেদ ২০২০ সালে ধরা পড়েন। সেই বছরের ১১ এপ্রিল তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আরেক খুনি আজিজ পাশা ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন বলে সরকারি সূত্রগুলো ধারণা করছে। তবে আজিজ পাশার মৃত্যুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ নেই।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তৎকালীন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার খুনি রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের মামলা পুনর্বিবেচনার নোটিশ দিয়েছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পালাবদলের পর তা থমকে গেছে।
ঢাকার সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ২০০৯ সালে খুনি রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফিরিয়ে আনেনি। এরপর রাশেদ চৌধুরী বাংলাদেশে তাঁর প্রাণ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন।