ঢাকা: হাসপাতাল পরিবর্তন করে আবার ব্যক্তিগত চেম্বারে ফিরলেন মা ও নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা। প্রায় দুই মাস পর সোমবার থেকে রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে চেম্বার শুরু করেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সেন্ট্রাল হসপিটালে চেম্বার করতেন ডা. সংযুক্তা। ১০ জুন হাসপাতালটিতে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় নবজাতকের মৃত্যু এবং মাহবুবা রহমান আঁখি নামে এক প্রসূতির মৃত্যু ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়। ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। তবে আঁখির মৃত্যুর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত’ মৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, তার সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদফতর আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুই তদন্ত কমিটি ডা. সংযুক্তা সাহাকে দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দেয়।
মৃত আঁখির চিকিৎসায় নিয়োজিত সবার বক্তব্যের ভিত্তিতে তৈরি করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিউটি ডাক্তার রোগীর অবস্থা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং রোগী ও তার পরিবারের সিজারিয়ান ডেলিভারির পরিবর্তে নরমাল ডেলিভারির জন্য চাপ দেওয়া মূলত নবজাতক ও তার মায়ের মৃত্যুর কারণ। এ ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষেরও কিছু দায় থাকতে পারে।
তদন্ত কমিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ৪টি অসঙ্গতি চিহ্নিত করেছে। ডা. সংযুক্তা সাহা ও ডা. মুনা সাহার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তাদের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া, ডা. সংযুক্তা সাহা উপস্থিত না থাকার তথ্য গোপন রাখা, অন্যান্য ডাক্তারদের আঁখির চিকিৎসা করতে দেওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডা. সংযুক্তা সাহার ‘বেআইনি’ প্রচারণার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।
তদন্ত কমিটি ২ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয়।
এর আগে ১৬ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটি হাসপাতালটি পরিদর্শন করে ৬ দফা নির্দেশনা দেয়। তাতে ডা. সংযুক্তা সাহাকে চিকিৎসায় যুক্ত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অপারেশন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। ৫৬ দিন বন্ধ থাকার পর সাত শর্তে সেন্ট্রাল হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু করার অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।