ঢাকা: বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত রোলমডেল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রাম এখন আর গ্রাম নেই। আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। রাস্তাঘাটের উন্নতি করেছি। তাই বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নয়নের রোলমডেল।

আজকে দেশের যে উন্নয়নটা করতে পেরেছি,  আমি যদি সময় দিতে না পারতাম তাহলে এ কাজ হতো না। 

 

রবিবার (২ জুলাই) সকালে টুঙ্গিপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে এ পর্যন্ত আসা। এই সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে।

একটি বাড়ি একটি খামার, ডিজিটাল বাংলাদেশ, কমিউনিটি ক্লিনিক, আমার গ্রাম আমার শহর, নানা সামাজিক নিরাপত্তামূলক কাজের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। 

 

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, একটি দেশের উন্নতি করতে হলে দেশটাকে জানতে হয়। আমার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরেছি।

বাংলাদেশের প্রায় কোনো অঞ্চলে আমার যেতে বাদ নেই। মাইলের পর মাইল কাদা-পানি দিয়ে পায়ে হেঁটেছি। কোনটা আমি করিনি! নৌকা, লঞ্চ, সাম্পান, ট্রলার, ভ্যান, ডিঙ্গি নৌকা সবকিছুতে ঘোরার অভিজ্ঞতা আমার আছে। এইভাবে আমি বাংলাদেশ ঘুরেছি। মানুষের অবস্থা দেখেছি।
সেই সময় থেকে বুঝে বুঝে কর্মসূচি হাতে নিয়ে উন্নয়ন করেছি। তাই আজকে বাংলাদেশকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছি।

 

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৯টায় নিজ বাসভবন থেকে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রায় পাঁচশ মিটার দূরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পায়ে হেঁটে যান। 

সেখানে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বাশার খায়েরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী মনোযোগের সাথে শোনেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তাহলে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। এদেশের সর্বনাশ করে দেবে। সেটা যেন তারা না করতে পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এজন্য সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে করতে হবে। 
তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। তাই আপনাদের বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। অনাবাদি জমি চাষযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। সেখানে শাক-সবজি ও ফসল উৎপাদন করতে হবে। বেশি করে গাছ লাগানোর ও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।   

শেখ হাসিনা বয়সজনিত কারণে অবসরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও টুঙ্গিপাড়ার মানুষ তাঁকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন- এ লক্ষ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সাহায্য করার কথা বলেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। 

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ। এ অনুষ্ঠানে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচ  ইউনিয়ন ও পৌরসভার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 
এদিনও টুঙ্গিপাড়ার নেতাকর্মীদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। গত শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী কোটালীপাড়া পৌঁছান। এসময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। পরে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধন শেষে কার্যালয় চত্বরে তিনটি গাছের চারা রোপণ করেন সরকার প্রধান। এরপর কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও দুপুরের খাবার খান প্রধানমন্ত্রী। পরে কোটালীপাড়া থেকে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে প্রথমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। 

শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের ভেতরের বড় তালাব (পুকুর) ও সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে লেকের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ ঘুরে ঘুরে দেখেন। এরপর টুঙ্গিপাড়ার নিজ বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন। এ সফরে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সঙ্গে রয়েছেন।

টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে দেখা দেয় বাড়তি উদ্দীপনা ও উৎসাহ। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন স্থানে রঙিন পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে সাজানো হয়।

দুই দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী রবিবার দুপুর সোয়া ২টায় ছেলেকে সাথে নিয়ে সড়ক পথে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনার হন।