ঢাকা: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, এটি এমন একটি মন্ত্রণালয় সেখানে প্রতিবছর মন্ত্রী বাজেটের অর্থ খরচ করতে পারেন না অথচ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেহাল, স্বাস্থ্য খাতে জনবল নেই, ডাক্তার, নার্স নেই।
জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য খাতে শতভাগ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না এটা ঠিক। তবে কভিড টিকা দেওয়ায় রেকর্ডসহ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনাকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, নানা জটিলতার কারণে শতভাগ সেবার মান নিশ্চিত করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল ও টেকনেশিয়ানের অভাব রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে ইতিমধ্যে জনবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় আমরা তিন বছর যুদ্ধ করেছি। ওই সময় ভ্যাকসিন ও ওষুধ ক্রয় এবং হাসপাতাল নির্মাণে ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। যদিও চলতি বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটেও স্বাস্থ্য খাতে ২৯ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
তিনি আরো বলেন, করোনার পাশাপাশি দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টের সমস্যা মোকাবেলায় সরকার আলাদা হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায় স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ও সিসিইউ বেড স্থাপন করা হচ্ছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে ছয়টি মেডিক্যাল কলেজ ও এক হাজার ৮০০ ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আপনি বিরোধীদলীয় এমপিদের নিয়োগ করার দায়িত্ব দেন, আমরা প্যানেল করে নিয়োগ দেব। তিনি বলেন, গত বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তিন হাজার কোটি টাকা ফেরত গেছে। বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করে জনগণের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে একজন ডাক্তারকে নিয়োগের দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের ১২ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা, ছয় হাজার ৯৩৩ কোটি ব্যয় হয়, ৪২ শতাংশ ফেরত যায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১৭ কোটি টাকা। খরচ হয়েছে ১০ হাজার ২৯২ কোটি, ফেরত যায় ২৯ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এ মন্ত্রণালয়ের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৭৯৪ কোটি। প্রথম ১০ মাসে তিন হাজার ২৩৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা মাত্র ৩৩ শতাংশ। প্রথম ১০ মাসে অলস হয়ে পড়ে ছিল ছয় হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদেশি সহায়তার ৫৯ শতাংশই ব্যয়ই হয়নি। অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এ রকম বহু দুর্নীতি রয়েছে, এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
গণফোরামের মোকাব্বির হোসেন খান বলেন, এখনো সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেতে হলে জনগণকে খরচ করতে হয় ৬৭ শতাংশ। সরকার মাত্র ৩৩ শতাংশ খরচ দেয়। চিকিৎসার জন্য একজন নাগরিককে বিপুল পরিমাণ খরচ জোগাতে গরু-ছাগল, জমিজমা বিক্রি ও ঋণ নিয়ে প্রতিবছর ৫২ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ ভারতসহ বহু দেশে পাড়ি জমাচ্ছে।
জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, স্বাস্থ্য খাতটি অত্যন্ত সেনসেটিভ। করোনার সময় প্রধানমন্ত্রী কিভাবে গণহারে ভ্যাকসিন দিলেন, এটা সত্যি বিস্ময়। অথচ সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন হচ্ছে না। জনগণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে তিনি দ্রুত ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগের দাবি জানান।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘দেশে এখন ভেজাল ওষুধে সয়লাব হয়ে গেছে। আমাদের ডাক্তাররা কম্পানির কাছ থেকে উপহার নিয়ে ভেজাল ওষুধ প্রেসক্রিপশন করছে। তা ছাড়া কম্পানিগুলো বিদেশে উন্নত মানের ওষুধ সরবরাহ করলেও দেশে নিম্নমানের ওষুধ বাজারজাত করছে।’