মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সাবেক এক সামরিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিক হত্যার ঘটনায় ছয় বছর বয়সী এক শিশুকে ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার (৬ জুন) দেশটির সেনানিয়ন্ত্রিত পত্রিকা ‘গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’ এ খবর জানিয়েছে।

গত ২২ মে মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগুনে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয় ৬৮ বছর বয়সী সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও সাবেক রাষ্ট্রদূত চো থুন অং-কে। চলমান গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এটিকে দেশটির অন্যতম উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে ধরা হচ্ছে।

 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি’র নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই মিয়ানমার জুড়ে বিক্ষোভ ও সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠী ও নতুন গঠিত প্রতিরোধ বাহিনীগুলো সেনাবাহিনীর কাছ থেকে বিস্তীর্ণ এলাকা দখলে নিয়েছে। এমনকি ইয়াংগুনের মতো শহরেও গেরিলা হামলার ঘটনা বেড়েছে।

পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ‘মোট ১৬ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ ও তিনজন নারী।

 

এর সঙ্গে প্রকাশিত একটি গ্রাফিক্সে গ্রেফতার হওয়া ছয় বছর বয়সী মেয়েশিশুর ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে, যাকে অভিযুক্ত হত্যাকারীর মেয়ে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনলাইনে প্রকাশিত সংস্করণে শিশুটির মুখ ঝাপসা করা হলেও সেনা-নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে মুখ স্পষ্ট ছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘গোল্ডেন ভ্যালি ওয়ারিয়র্স’ দাবি করেছে, তারা সাবেক জেনারেলকে হত্যা করেছে। কারণ তিনি সেনা অভিযান, বিশেষ করে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার পক্ষে ছিলেন।

 

জান্তা সরকারের দাবি, গোল্ডেন ভ্যালি ওয়ারিয়র্স গোষ্ঠীটি ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ (এনইউজি)-এর সহযোগিতায় এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। হত্যার বিনিময়ে এক খুনি প্রায় দুই লাখ কিয়াত পেয়েছে। তবে এনইউজির মুখপাত্র নাই ফোন লাত এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আমরা কাউকে হত্যার জন্য টাকা দেই না।

সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা সরকার ২৯ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে ছয় হাজার নারী ও ৬০০ শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে রাজনৈতিক বন্দিদের সহায়তাকারী সংগঠন অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)।

এএপিপির তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে ৬ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক ও গণতন্ত্রপন্থি কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৬৪৬ জন নারী এবং ৮২৫ জন শিশু রয়েছে।

 

অবশ্য জান্তা সরকার দাবি করেছে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে না। বরং দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে সেনাবাহিনী।

 

 

 

তবে ছয় বছর বয়সী একটি শিশুকে ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে গ্রেফতারের ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।